রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭

কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি ও কিছু কথা। -এআরএইচ

কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি ও কিছু কথা



দেশের কয়েকটি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কওমী শিক্ষা ব্যবস্থা একটি। অন্যান্য দেশে এই শিক্ষা স্বীকৃতি থাকলেও বাংলাদেশ এই শিক্ষার কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। যার ফলে সরকারি চাকরি বা অন্য যে কোনো সুযোগ -সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের হাজার কওমী শিক্ষার্থীরা।

বেশ অনেকদিন ধরে শুনে আসছি সরকার কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক। আমরা যারা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আমরাও চাই তারা (কওমী) স্বীকৃতি পাক কিন্তু তার আগে আলিয়া এবং কওমীর শিক্ষার সমন্বয় করা হোক।

আলিয়া মাদ্রাসার রাষ্ট্রীয় একটি বোর্ড থাকলেও অপরদিকে কওমী মাদ্রাসার কয়েকটি বোর্ড গড়ে উঠেছে। আসলে তাদের কোনো স্বীকৃতি নেই বলে যে যার মত করে নিজের মতাদর্শ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠা করেছেন এক একটি বোর্ড। যার দ্বারা বর্তমানে কওমীর প্রায় ৫ থেকে ৬ টি বোর্ড রয়েছে। এদের সিলেবাসও আলাদা আলাদা।

আলিয়া মাদ্রাসা বোর্ডের অধিনে ৩ টি জামাত পরিচালিত হয়।
১।ইবতেদায়ি ; যেটি ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত।
২।দাখিল ; যেটি ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত।
৩।আলিম ; যেটি ১১দশ শ্রেণী থেকে ১২শ শ্রেণী পর্যন্ত।
এই ৩টি জামাতকেই সমন্বয় করা হয়েছে সাধারণ শিক্ষার সাথে আর মানের দিক থেকেও একই রাখা হয়েছে। এরপরে আরও দুটি জামাত আলিয়া মাদ্রাসায় হয়
১।ফাযিল; এটি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স করতে পারে।
২।কামিল; এটিও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ বছর মেয়াদী মাস্টার্স কোর্স। এখানে বিভিন্ন বিষয়ে মাস্টার্স করা যায়।
সবগুলোকে একত্রে সময় হিসাব করলে দেখা যায়
ইবতেদায়ি ৫ বছর
দাখিল ৫ বছর
আলিম ২ বছর
ফাযিল ৪ বছর
কামিল ২ বছর
মোট = ১৮ বছর।
অপর দিকে কওমী মাদ্রাসায়ও ৫ জামাত পরিচালিত হয় তাদের নিজ নিজ বোর্ডের অধিনে। সবচেয়ে বড় বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী জামাতের হিসাব করা যাক।
১।বিশেষ জামাত ; এখাকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়।
২। আল মারহালতুস সানাবিয়্যাহ আল আম্মাহ। যার সময় দুই বছর।
৩। আল মারহালতুস সানাবিয়্যাহ আল উল্ইয়া। যার সময় ২ বছর।
৪। মারহালাতুল ফযীলাত। এর সময়ও দুই বছর। কওমী থেকে এই জামাতকে অনার্সের সমমান দাবী করা হয়।
৩। মারহালাতুত তাকমিল। এর ব্যাপ্তি ২ বছর। যাকে মাস্টার্সের সমমান বলে দাবী করা হয়।
সব জামাতের সময় যোগ করলে দেখা যায় মোট ১৬ বছর।
অর্থাৎ আলিয়ার থেকে ২ বছর আগেই এরা মাস্টার্সের মর্যাদা পাচ্ছে।

জানতে পারলাম আগামী ১১ই এপ্রিল কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেয়া হবে। আর কোনো রুপ সমন্বয় ছাড়াই এটা একজন আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে মেনে নেয়া যায় না।

দুটি শিক্ষা ব্যাবস্থার মধ্যে অনেক গুলোর সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।
১। সময়ের। যদি কওমী মাদ্রাসার ফযীলাত জামাতকে অনার্সের সমমান দেয়া হয় তাহলে কওমীর ছাত্ররা ১৪ বছরেই BCS এর যোগ্যতা অর্জন করবে। যেখানে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের আসতে সময় লাগবে আরও দুই বছর। বর্তমান BPSC কর্তৃক স্বিদ্ধান্ত ১ বছরের মধ্যেই BCS পরীক্ষা শেষ করবে। যার দ্বারা কওমীর ছাত্ররা দুটি পরীক্ষায় বেশি অংশগ্রহণ করতে পারবে। আর BCS ছাড়াও অন্যান্য চাকরির. যোগ্যতা অর্জন করবা আলিয়া এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগে। যার দ্বারা সমাজে বড় ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হবে।

২। বেফাক কর্তৃক ১৬ বছর মেয়াদী শিক্ষা ব্যাবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ কওমী মাদ্রসায় ১০ -১১ বছররের মধ্যেই কোর্স শেষ করে দেয়া হয় এমনকি কোনো মাদ্রাসায় ৮ বছরেও কোর্স শেষ করা হয়। তাদের স্বীকৃত দিলে এরাও সমমানের অধিকার পাবে এতে করে বিশাল আকারে বৈষম্য দেখা দিবে।

৩। কওমী মাদ্রাসায় দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। যার দ্বারা এতটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তারা তাদের দেশটাকে কতটা আপন করে নিতে পেরেছে।

৪। ইসলামে বাজনা ছাড়া শালীন গান গাওয়া জায়েজ থাকলেও তারা দেশের জাতীয় সঙ্গীতকে উপেক্ষা করে।

এমতাবস্থায় সরকারের উচিত সমন্বয় করে তাদের স্বীকৃতি দেয়া তাছাড়া নয়।

সরকারের প্রতি বিকল্প প্রস্তাব।
আলাদা করে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির কোনো প্রয়োজন নেই। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধিনে আলাদা একটি কমিশন গঠন করে তাদের কাছে কওমী মাদ্রাসার দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া যেতে যারে। এতে করে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। 


আরও দেখুন 

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

রোজা থেকে হস্তমৈথুন করার হুকুম

রোজা থেকে কী হস্তমৈথুন করা যাবে? রোজা থেকে বা রোজা না থেকে অর্থাৎ কোনো সময়ের জন্যই হস্তমৈথুন করা জায়েজ নয়।  রোজা থেকে কেউ যদি হস্তমৈথুন করে ...