ব্লু হোয়েল (Blue Whale) গেম যেভাবে আপনাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ব্লু হোয়েল বা নীল তিমি একটি অনলাইন প্রতিযোগিতামূলক খেলার নাম, এটি "নীল তিমি প্রতিযোগিতা (ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ)" নামেও পরিচিত। ব্লু হোয়েল একবিংশ শতকের অনলাইন গেমগুলির মধ্যে একটি হিসাবে দাবীকৃত। নাম ধারণা করা ব্লু হোয়েল একটি রাশিয়ান অনলাইন প্রতিযোগিতামূলক গেম। সোশ্যাল গেমিং পেজের অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের নির্দেশ মোতাবেক ৫০ (পঞ্চাশ) দিন ধরে বিভিন্ন টাস্ক পূরণ এবং সর্বশেষ চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্লেয়ারকে আত্মহত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত ব্লু হোয়েল খেলতে গিয়ে ১৩০ জনেরও বেশি কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করা হয়।[১]
যেভাবে নামকরণ করা হয়
ব্লু হোয়েল বা নীল তিমি নিজেই জীবনের একটি পর্যায়ে চলে আসে সমুদ্র তীরে, শুকনা ভূমিতে ধীরে ধীরে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বাস্তব প্রমান পাওয়া যায় ২০০৮ সালে ৫৫টি নীল তিমি একযোগে সমুদ্র সৈকতে চলে আসে, উদ্ধারকারীরা তাদেরকে সাগরে ফেরত পাঠালেও তারা তীরের দিকে বারবার চলে আসে। আপাতভাবে মনে হয় আত্মহত্যাই যেন তাদের উদ্দেশ্য। ধাপে ধাপে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া এই গেমটির নাম তাই ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ বেছে নেওয়া হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করেন।[২][৩]
আবিষ্কারের ইতিহাস
ব্লু হোয়েল গেমটি রাশিয়ায় ২০১৩ সালে শুরু হয়,ফিলিপ বুদেইকিন নামে সাইকোলজির এক প্রাক্তন ছাত্র নিজেকে ওই গেমের আবিষ্কর্তা বলে দাবি করে। একুশ বছরের ওই রুশ যুবকের দাবি, যারা মানসিক অবসাদে ভোগে, প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার কথা ভাবে, তাঁদের আত্মহত্যার জন্য মজাদার পথ তৈরি করাই এই গেমের ভাবনা।
ব্লু হোয়েল গেমটি ২০১৬ সালের মে মাসে রাশিয়ান পত্রিকা ন্যভায়া গ্যাজেটা মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে সেখানে ভিকোন্তাকে নামের সামাজিক মাধ্যমের এফ৫৭ (এফ৫৭ মূলত ডেথ গ্রুপনামে পরিচিত) নামের একটি গোষ্ঠীর অনুসারী কমপক্ষে ১৬ জন কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যাকে এই গেমটির সাথে সম্পৃক্ততা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি রাশিয়ার উপর একটি নৈতিক ভীতির ঝড় তোলে অসংখ্য প্রতিবেদন তৈরি হয় কিন্তু এখনও এর কোনটিই সরাসরি আত্মহত্যার সাথে নিদৃষ্ট গোষ্ঠীর কার্যক্রমকে কে দায়ী করার মতো যথেষ্ট মজবুত নয়।
এই গেমের সবচেয়ে আলোচিত দুই ভিকটিম হলেন, ইউলিয়া কোন্সটান্টিনোভা (১৫) ও ভেরোনিকা ভলকোভা (১৬)। তারা দুই জন একই সঙ্গে আত্মহত্যা করেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাশিয়া ছাড়াও আর, ব্রাজিল, চীন, গেমটি চলছে।[৪]
বাংলাদেশে আলোচনার কারণ
বাংলাদেশেও পৌঁছে গেছে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমস। আর এই গেমসের নেশায় পড়ে রাজধানীতে আত্মহত্যা করেছে এক কিশোরী। গত বৃহস্পতিবার রাতে সেন্ট্রাল রোডের বাসায় নিজের পড়ার কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্মনের মেয়ে এবং ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে। নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণা বিদ্যালয়ের ফার্স্ট গার্ল ছিল। ওয়াইডব্লিউসিএ হাইয়ার সেকেন্ডারি গালর্স স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তালিকায় তার অবস্থান ছিল প্রথম ।
গেমটি যেভাবে আপনাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে বা কাঠামো
' ব্লু হোয়েল ' গেমটি ৫০ টি লেভেলে বিভক্ত ।
গেমটি মূলত একটি ডার্ক ওয়েভের ( dark wave ) গেম । ডার্ক ওয়েভ হলো ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ । মনে রাখবেন - গেমটি আপনি একবার ডাউনলোড করলে আর কখনোই আনইনস্টল করতে পারবেন না । গেমটি আপনার ফোনের সিস্টেমে ঢুকে আপনার আপনার আই পি এড্রেস , মেইলের পাসওয়ার্ড , ফেসবুক পাসওয়ার্ড , কনট্যাক্ট লিস্ট , গ্যালারী ফটো এমনকি আপনার ব্যাংক ইনফর্মেশান ! আপনার লোকেশান ও তারা জেনে নিচ্ছে !
' ব্লু হোয়েল ' গেম ওপেন করা মাত্র আপনাকে একজন এডমিন পরিচালনা শুরু করবে । আপনাকে জিজ্ঞেস করবে - ' গেমটি খেলা শুরু করলে আপনি কোনোভাবেই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না , আপনি সর্বশেষে মৃত্যু বরণও করতে পারেন , আপনি কি চ্যালেন্জ গ্রহন করতে আগ্রহী ? '
আপনি ইয়েস বা নো অপশনের মধ্যে ' ইয়েস ' অপশন ক্লিক করা মাত্রই পা দিয়ে দেবেন মৃত্যু ফাঁদে ।
গেমটির প্রথম দশটা লেভেল খুবই আকর্ষনীয় । ইউজার এডমিন কিছু মজার মজার নির্দেশনা দেন - যেমন রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে হরর ছবি দেখা , চিল্লাচিল্লি করা , উঁচু ছাদের কিনারায় হাঁটাহাঁটি করা , পছন্দের খাবার খাওয়া ইত্যাদি নির্দেশনা দিতে দিতে এডমিন হাতিয়ে নেবেন আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন । প্রথম দশ টা লেভেল পার করার পর আপনাকে তৈরি করা হবে পরবর্তী দশটি লেভেলের জন্য । পনেরো লেভেল পর্যন্ত চলবে আপনার ইনফরমেশান হাতানোর কাজ ! পনেরো লেভেলের পর আপনাকে কঠিন মিশন দেয়া শুরু হবে ! যেমন অ্যাডমিন আপনাকে বলতে পারে আপনার হাতে ব্লেড দিয়ে নীল তিমির ছবি আঁকুন !
প্রথম বিশটা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার পর অ্যাডমিন তার কৌশল পরিবর্তন করতে শুরু করে ।
আপনি টেরই পাবেন না প্রথম বিশ ধাপে সংগ্রহ করে ফেলা আপনার তথ্যের উপর ভিত্তি করে আপনাকে মোহাক্রান্ত বা হিপনোসিস পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু করা হবে ।
আপনি তখন ভাববেন এই গেম ছাড়া আপনার বেঁচে থাকা অসম্ভব । আপনাকে শীতের দিনে খালি গায়ে ঘুরতে বলা হবে , বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করা , বন্ধুর মোবাইল চুরি করা , আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটার সাথে দুর্ব্যবহারের মিশন দেয়া হবে আপনাকে ! আবার এসবের প্রমাণের ছবি বা ফটো এডমিনকে পাঠাতে হবে আপনার ! এভাবেই কৌশলে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের থেকে কৌশলে আলাদা করে ফেলা হবে আপনাকে এবং আপনি পৌঁছে যাবেন পঁচিশ লেভেলে !
পঁচিশ লেভেলের পর নির্দেশনা আসবে মাদক বা ড্রাগ নেবার ! এভাবেই সম্মোহিত করে করে আপনাকে তিরিশ লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে ।
তিরিশ তম লেভেল আপনি অতিক্রম করার পর গেম এডমিন হঠাৎ আপনার সাথে একটু চিট শুরু করবে !একত্রিশ তম লেভেল আনলক করবে না , এদিকে আপনি হয়ে উঠবেন ক্রেজী !
তারপর কিছুদিন আপনাকে সারপ্রাইজ দিয়ে হঠাৎ এডমিন - বলবে একত্রিশ তম লেভেল আনলকড ! আপনার নগ্ন ছবি চাওয়া হবে এই স্তরে ! আপনি হিপনোসিস ও মাদকের কারণে নিজের নগ্ন ছবি পাঠাতেও চিন্তা করবেন না , ড্রাগ নেবার র মাত্রা বাড়াতে থাকবেন আপনি ! এরপর নির্দেশনা আসবে আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে সেক্স করে গোপনে ছবি তুলে আপলোড করতে বা নিজের শরীরে একাধারে শ খানেক সুঁই ফোটাতে এবং ফটো আপলোড করে পাঠাতে ।
এভাবেই চলে যাবেন আপনি চল্লিশ তম লেভেলে !
এবার আপনি ভীত হয়ে গেমার টিমকে অনুরোধ করবেন আপনাকে মুক্তি দেবার জন্য ! আপনি কাঁদবেন , হাতজোড় করবেন , চাইবেন গেমটি আনইনস্টল করার জন্য !
তখন শুরু হবে ব্ল্যাকমেইলিং ! গেমার টিম বা এডমিন তখন আপনারই পাঠানো সকল তথ্য ফাঁস করে দেবার হুমকি দেবে , আপনি বাধ্য হয়ে প্রবেশ করবেন একচল্লিশ তম স্তরে !
একচল্লিশ থেকে ঊনপন্চাশ তম লেভেলে আপনি প্রচন্ড হতাশ আর মাদকাসক্ত হবেন। পঞ্চাশ তম স্তরে আপনাকে মুক্তির শর্ত দেয়া হবে ! বলা হবে আপনাকে নিজের শরীরে অ্যানাসথেসিয়ার ড্রাগ ক্যাটামিন পুশ করে তাদের কে ছবি পাঠাতে এবং নিশ্চিত দশ তলার চেয়েও উঁচু কোনো ছাদের একেবারে কিনারায় দাঁড়িয়ে যদি সেলফি আপলোড দিতে পারেন তবে আপনি মুক্ত !
আপনি সেটা পারবেন না আর , কারণ শরীরে পুশ করা ক্যাটামিন আপনার মস্তিষ্কে চলে যাবে ততোক্ষণে ! আপনি মোবাইলের স্ক্রীণে তখন নির্দেশ আসবে - ' নিচের দিকে তাকাও ! লাফ দাও , মুক্তি পাও ! '
আপনি মুক্তি পেতে গিয়ে আত্মহত্যা করবেন !
এই ব্লু হোয়েল গেমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার গ্রাফিক্স , ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক ভীষণ করুন ! All i want ও Ranway গানের মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে ।
দুটো মিউজিক শুনলেই শরীরের রক্ত হীম হয়ে যাবে !
আক্রান্ত দেশ
আর্জেন্টিনা
ব্রাজিল
বুলগেরিয়া
বাংলাদেশ
চিলি
চীন
ভারত
ইতালি
কেনিয়া
পাকিস্তান
পোল্যান্ড
পর্তুগাল
রাশিয়া
সৌদি আরব
সার্বিয়া
স্পেন
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্র
উরুগুয়ে
প্রতিক্রিয়া
মার্চ ২০১৭, রোমানিয়ান অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী কারমেন ড্যান এই গেমের বিষয়ে তার গভীর উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।বুখারেস্ট এর মেয়র গাব্রিয়েলা ফায়ারা গেমটিকে "অত্যন্ত বিপজ্জনক" হিসাবে বর্ননা করেছেন।
ব্রাজিলে, ব্লু হোয়েলের বিপরীতে সাও পাওলোতেব্যলিয়া রোজা নামে একটি সক্রিয় গোষ্ঠী শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে এগিয়ে আসে। তাদের মূলমন্ত্রই ছিল ইতিবাচক কাজ, জীবনের মূল্যবোধ তুলে ধরা এবং বিষণ্নতার সাথে যুদ্ধ।
অগাস্ট ২০১৭, ভারত সরকারের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক মাধ্যমগুলিকে (গুগল, ইয়াহু, ফেসবুকসহ আরও বিভিন্ন) আনুষ্ঠানিকভাবে এই গেমটির এবং অংশগ্রহণকারীর মাঝের সকল ধরনের সংযুক্তি বিচ্ছিন্ন করার অনুরোধ জানায়।[৫]
আমার মন্তব্য
হয়তো কৌতুহল জাগতে পারে মনে একবার খেলেই দেখি এই কৌতুহল আপনাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই নিজেকে ভালবাসুন পরিবারকে ভালোবাসুন। এসব বাজে জিনিসে মন দিবেন না। আর সবথেকে বড় বিষয় উপরে যা লেখা হয়েছে সবই নির্ভরযোগ্য পাতা থেকে সংগৃহিত তাই অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
১। উইকিপিডিয়া
২। উইকিপিডিয়া
৩। রয়টার্স
৪। উইকিপিডিয়া
৫। উইকিপিডিয়া