হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) কী? হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ, করণীয়, প্রতিরোধ।
পর্যাপ্ত অক্সিজেন -সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহের অভাবে কার্ডিয়াক পেশির ধ্বংস বা মরে যাওয়াকে হার্ট অ্যাটাক বলে। করোনারি ধমনির অন্তর্গাত্রে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল জমে ধমনির অন্তঃস্থ গহ্বর বন্ধ হয়ে গেলে হৃৎপেশিতে পুষ্টি ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে হৃৎপেশি ধ্বংস বা মরে যায় এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হার্ট অ্যাটাকের অপর নাম মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন (Myocardial Infraction)
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণঃ
করোনারি ধমনিতে কোলেস্টেরল জাতীয় পদার্থ জমা হওয়া থেকে হার্ট অ্যাটাকে পরিসমাপ্তি হওয়া পর্যন্ত অনেক দিন অতিবাহিত হয়। এ সময়ের ভেতরে বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে নিম্নবর্ণিত লক্ষণগুলো বেশি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়।
বুকে অস্বস্তিঃ বুকের ঠিক মাঝখানে অস্বস্তি হওয়া যা কয়েক মিনিট থাকে, চলে যায় আবার ফিরে আসে। বুকে অসহ্য চাপ, মোচড়ান, আছড়ান বা ব্যথা অনুভূত হয়।
ঊর্ধ্বাঙ্গের অন্যান্য অংশে অস্বস্তিঃ এক বা উভয় বাহু, পিঠ, গলা, চোয়াল বা পাকস্থলির উপরের অংশে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব।
ঘন ঘন নিঃশ্বাস -প্রশ্বাসঃ
বুকে অস্বস্তির সময় ঘন ঘন নিঃশ্বাস -প্রশ্বাস ঘটে। অনেক সময় বুকে অস্বস্তি হওয়ার আগেও এমন অবস্থা দেখা দিতাম পারে।
বমি -বমি ভাবঃ পাকস্থলিতে অস্বস্তির সাথে বমি -বমি ভাব, বমি হওয়া, হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করা অথবা ঠাণ্ডা ঘাম বেরিয়ে যাওয়া।
ঘুমে ব্যাঘাতঃ ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা, নিজেকে শক্তিহীন বা শ্রান্ত মনে হওয়া।
উল্লেখিত লক্ষণগুলোর দু একটি সবার মধ্যেই দেখা যায়। তার অর্থ এই নয় যে, সবাই হার্টা অ্যাটাকে আক্রান্ত। একই লক্ষণ সবার মধ্যে দেখা যায় না, শারীরিক গড়ন, বয়সভেদে লক্ষণের হেরফের হয়। তবে লক্ষণগেলো তাদের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যারা -
উচ্চ রক্ত চাপের রোগী, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল সম্পন্ন, ধূমপায়ী, ডায়াবেটিক রোগী, কম শারীরিক প্ররিশ্রমকারী, স্যাচুরেটেড চর্বি, কোলেস্টেরল ও সোডিয়াযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণকারী, অতি ওজন ও স্থূলতা সম্পন্ন, ৪৫ বছর বয়স্ক পুরুষ বা ৫৫ বছর বয়স্ক নারী ইত্যাদি।
হার্ট অ্যাটাকে করণীয়ঃ
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ও উপসর্গের প্রকাশ ঘটে খুব তাড়াতাড়ি। তবে কখনওবা কয়েক ঘন্টা, কয়েকদিন বা সপ্তাহ লেগে যায়।
লক্ষণের ধরণগুলো জানা না থাকলে নিজে বা কারও সাহায্য নিয়ে দ্রুত হৃৎচিকিৎসকের কাছে পৌছাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সাহায্য পাওয়া যাবে, হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিও হবার তত কম। লক্ষণ -উপসর্গ, পারিবারিক ইতিহাস ও চেকআপের ফলাফল দেখে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। হৃৎরোগীদের পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের সহমর্মিতা অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিরোধঃ
হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য -পানীয় প্রয়োজন। ঋতুকালীন টাটকা ফল ও সবজি খেতে হবে। চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। বডি মাস ইন্ডেক্স (Body Mass Index, BMI) মেনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। সঠিক ওজন, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম যেমন প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাটা ইত্যাদি নিয়মিত করতে হবে। ধূমপায়ী হলে অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। অধূমপায়ী হলে ধূমপান না করার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। শুধু হৃৎরোগ নয়, অনেক অসুখের মূলে রয়েছে অ্যালকোহল গ্রহণ। জীবনাভ্যাসে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ রাখতে হবে। কোলেস্টেরল, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ চালিয়ে যেতে হেব বা বন্ধ. করতে হবে। বছরে অন্তত একবার (সম্ভব হলে দুবার) সমগ্র দেহ চেকআপের ব্যবস্থা করতে হবে।