রোজার পরিশুদ্ধতার জন্য সদকাতুল ফিতর।
পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন "হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমনটি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার"। (বাকারা -১৮৩)
মাহে রমাদান আমাদের মাঝে হাজির হয় রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে। রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন "নিশ্চিয়ই রোযা আমার (আল্লাহর) জন্য আর আমিই (আল্লাহ) এর প্রতিদান দেব। (বুখারি ও মুসলিম, মেশকাতুল মাসাবিহ - কিতাবুস সাওম)
রমজানের রোযা রাখতে গিয়ে অনেক সময় অনেক ভুলত্রুটি হয়ে যায় যার বিশুদ্ধতার জন্য আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের জন্য ফিতরার ব্যবস্থা করছেন এর মাধ্যমে যেন রোযাকে পরিশুদ্ধ করা যায়।
সদকাতুল ফিতর বা ফিতরাকে জাকাতুল ফিতরও বলা হয় ইসলামের পরিভাষায়।
ফিতর / ফাতুর হলো এমন খাবার যার দ্বারা রোজা ভঙ্গ করা হয়। বা এভাবে বলা যেতে পারে যে খাবার দিয়ে রোযা ভাঙা হয় তাকে ফিতর বা ফাতুর বলে। (মুযাম আল ওয়াসিত)
সদকাতুল ফিতর একটি আর্থিক ইবাদত। রমজানের রোযার ভুলত্রুটিকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বিধান দিয়েছেন।
ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিতরা বাধ্যতামূলক করেছেন। যার পরিমাণ হবে এক সা খেজুর বা এক সা জব। ছোট - বড়, স্বাধীন - পরাধীন সকলের জন্য এটি ওয়াজিব। (বুখারি)
যাদের উপর ফিতরা ওয়াজিবঃ
যে আযাদ মুসলমান, এমন সম্পদের মালিক যার দ্বারা তার জরুরি প্রয়োজন সম্পন্ন করে কিছু উদ্বৃত্ত থাকে। (এর মধ্যে সম্পদ বৃদ্বিপ্রাপ্ত হওয়ার শর্ত নেই) তার উপর ফিতরা ওয়াজিব হয়। (কাজিখান)
ফিতরা ঈদুল ফিতরের দিন ফজর উদয় হওয়ার পর ওয়াজিব হয়। কোন ব্যক্তি যদি ফজরের আগে মারা যায় তাহলে তার ফিতরা ওয়াজিব হবে না আবার ফজরের পর কোন শিশু জন্ম গ্রহণ করলে বা কেউ মুসলিম হলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব হবে না। কিন্তু ফজের পরে গেলে বা ফজরের আগে জন্ম গ্রহণ বা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব হবে। কেউ ফজরের আগে ধনী হলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব হবে আর যদি ফজরের পূর্বে গরিব হয় তাহলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব হবে না। (মুহিতে সরুখি) ঈদের দিন সকালে নামাজের পূর্বে ফিতরা আদায় করা মুস্তাহাব আগে আদায় করলেও জায়েজ হবে।
ফিতরার পরিমাণঃ
ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কে শরার দুটি মত পাওয়া যায়। ১. এক সা ৩. অর্ধ সা বা নিসফে সা
এক সা = সোয়া তিন কেজির কিছু বেশি বা ৩ কেজি ২৭১ গ্রাম।
নিসফে সা = দেড় কেজির কিছু বেশি বা ১ কেজি ৬৩৬ গ্রাম। (আওজানে শরিয়্যাহ)
খেজুর, কিশমিশ, পনির জব দিয়ে আদায় করলে ১সা আর গম দিয়ে আদায় করলে অর্ধ সা।
যা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হয়ঃ
চার প্রকার জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। ১. যব ২. গম ৩. খেজুর ৪. কিসমিস (শরহে তাহাবি) তবে এগুলো সমমূল্যে দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়েজ। (আলমগিরি)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় এই চার জিনিস দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা হত। হযরত আবু সাঈদ খুদুরি রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সদাকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্যও ছিল জব, কিশমিশ, খেজুর ও পনির (বুখারি ও মুসলিম) মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর খিলাফতের সময়ে অনেকে গম দুয়ে ফিতরা আদায় করতেন। (বুখারি ও মুসলিম)
ওপরের যে কোনো একটিকে ধরে তার মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। যেহেতু ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব তাই ন্যায্য মূল্য দিয়ে আরও কিছু বেশি দিয়ে নফল আদায় করা উচিত।
যাদেরকে সদাকা দিবেঃ
১. গরিব। গরিব সেই ব্যক্তি, যার নিকট কিছু মাল আছে., কিন্তু নিসাব পরিমাণের থেকে কম বা থাকলেও তা বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা নেই বা তার প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত নেই এমন লোককে গরিব হিসেবে গন্য করা যায়। (ফতহুল কাদির) মূর্খ্য গরিবকে সদাকা দেয়ার থেকে জ্ঞানী গরিবকে সদাকা দেয় উত্তম।
২. মিসকিন। মিসকিন সেই ব্যক্তি যার কাজে খাওয়া পরার জন্য কিছুই নেই বরং লোকের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে এমন ব্যক্তি। (ফতহুল কাদির)
৩. ইমাম কর্তৃক যে ব্যক্তি সদাকা আদায়কারী হিসেবে নিয়োগ হয়েছে। এই ব্যক্তিকে আমেল বলা হয়। আমেল ব্যক্তি সদাকা পেতে পারে। (কাফি)
৪. গোলাম আযাদ করে দেয়া। যে গোলাম মুকাতিব আছে, তাকে আযাদ করতে সাহায্য করবে। (মুহিতে সরুখি) মুকাতিব ধনী হলেও জায়েজ।
৫. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ এরুপ যে তার ঋণের চেয়ে বেশি মাল নেই বা এত ঋণ যে সে পরিশোধ করতে পারে না (তাবিয়িন)
৬. মুসাফির। এমন মুসাফির যে নিজের সম্পদ থেকে দূরে অবস্থান করছে।
৭. ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে এমন ব্যক্তি। ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয় বা এমন অনিষ্টকারী কাফেরের থেকে. রক্ষা পাবার জন্য সদাকা দেয়া যায়।
৮. আল্লাহর রাস্তায়।