মুদারাবা কী এবং শরিয়াহ বোর্ড পরিচালিত ব্যাংকে মুদারাবা একাউন্ট কী এবং কিভাবে পরিচালিত হয়?
হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন করা সুন্নাত। অর্থ উপার্জনের উত্তম পন্থা হচ্ছে তিজারত বা ব্যবসা। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা নয় জায়গায় ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন। আর আল্লাহর নাবি (সাঃ) বলেছেন - রুজির দশ ভাগের নয় ভাগই রয়েছে ব্যবসায়। এ ব্যবসায় নানাবিধ পদ্ধতি রয়েছে যার মধ্যে মুদারাবা অন্যতম।
সাধারণত মুদারাবা বলতে আমরা বুঝি লেনদেন করা, উপার্জন করা, প্রচেষ্টা চালানো, লাভবান হওয়া, বিনিয়োগ করা ইত্যাদি। ইংরেজিতে বলা হয় Travel for business, to earn profit ইত্যাদি।
মুদারাবা বলা হয় এমন চুক্তি, যাতে দু' শরীকের একজন মূলধন দিয়ে এবং অপরজন শ্রম দিয়ে উভয়ে লভ্যাংশের অংশীদার হয়।
ইসলামী অর্থনীতির ভাষায় - মুদারাবা এমন একটি অংশীদারি কারবার, যেখানে উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় মূলধন বিনিয়োগ করে। একপক্ষের মূলধনের সঙ্গে অপরপক্ষের ব্যবসায়িক দক্ষতা যুক্ত হলে একে মুদারাবা বলে।
বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন প্রণেতাগণের ভাষায়, একের মূলধন এবং অন্যের শ্রম দ্বারা ব্যবসায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুক্তিমূলে মুনাফায় যে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে মুদারাবা বলে।
মুদারাবা কে দুইভাগে ভাগ করা যায়
ক. সাধারণ বিনিয়োগঃ পুঁজি বিনিয়োগকারী যদি কারবারিকে যে কোনো ধরনের ব্যবসা করার স্বাধীনতা প্রদান করে, তাহলে মুদারিব তার ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে। অর্থাৎ ব্যবসায়ের সময়সীমা, স্থান, শ্রেণী, অংশীদারগণের সংখ্যা, কার কাছ থেকে মাল কিনতে হবে, কার কাছে বিক্রি করতে হবে তা নির্দিষ্ট না থাকা। এ ধরনের মুদারাবাকে সাধারণ বিনিয়োগ বলে।
খ. নির্দিষ্ট বিনিয়োগঃ রাব্বুল মাল কারবারিকে বিশেষ ধরনের ব্যবসায় করা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে মুদারিববকে শুধু রাব্বুল মালের নির্দেশিত ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এ ধরনের মুদারাবাকে নির্দিষ্ট বিনিয়োগ বলে।
মুদারাবা বিশুদ্ধ হওয়ার কিছু শর্তাবলী আছে। যেমনঃ
- রাব্বুল মাল ও মুদারিবব উভয়ে বিবেকবান হওয়া।
- কারবার শুধু করার পুর্বেই উভয়পক্ষের প্রকৃত ললভ্যাংশ বন্টনের হার নির্ধারণ করা।
- কোনো পক্ষের মুনাফা মূলধনের কোনো আনুপাতিক অংশের সাথে নির্দিষ্ট না করা।
- একাধিক ব্যক্তির সাথে মুদারাবা চুক্তি হলে প্রত্যেক মুদারিব পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে মূলধন ব্যবহার করা।
- সাধারণ ব্যবসায় যে সকল কাজ হয়ে থাকে, মুদারিব রাব্বুল মালের সুস্পষ্ট অনুমতি ছাড়া তার ব্যতিক্রম না করা।
- কোনো পক্ষের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভভ ধার্য না করা।
- মুনাফার সিদ্ধান্তকৃত আনুপাতিক অংশ ব্যতীত মুদারিব মুদারাবার জন্য কৃত স্বীয় কাজের বিনিময়ে কোনো ভাতা বা বিনিময় দাবি না করা।
- দু পক্ষের কারো জন্য অতিরিক্ত প্রদানের শর্ত না থাকা।
- মুদারাবার চুক্তিতে বাধা সৃষ্টিকারী কোনো বস্তু না থাকা।
- চুক্তি এমন দীর্ঘমেয়াদী না করা, যাতে উভয়পক্ষের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
মুদরাবার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমনঃ
- মুদারাবা একটি দ্বীপক্ষীয় কারবার। এ কার্যক্রমে সরকার হস্তক্ষেপ করেন না। তবে প্রয়োজনে পরামর্শ প্রদান করতে পারেন।
- মুদারাবা কারবারে মূলধন সরবরাহকারীকে সহিবে মাল এবং সংগঠন পরিচালনাকারী অপরপক্ষকে মুদারিব বলে।
- সহিবে মাল এর প্রদানকৃত মূলধন নগদ অর্থ তথা মুদ্রাজাতীয় জিনিস হবে।
- বিনিয়োগ কার্যক্রমের লাভ পূর্ব নির্দিষ্ট অনুপাতে মুদারিব এবং সহিবে মাল এর মাঝে বন্টন হবে। তবে সহিবে মালের প্রাপ্য লাভভ পূর্ব নির্ধারিত কোনো টাকার অঙ্ক হবে না।
- কোনো কারণে বিনিয়োগ কার্যক্রমে লোকসান হলে এর দায়ভার সহিবে মাল বহন করবেন। মুদারিব এর অদক্ষতা বা অবহেলার দরুন লোকসান হলে সে দায়ী থাকবে না।
বিচিত্র এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই বিত্তবান নয়। আবার প্রত্যেকেই বিত্তহীন নয়। আবার কারো অর্থ থাকলেও তার থাকে না কারবার করা কিংবা কায়িক প্ররিশ্রম করার যোগ্যতা। অন্যদিকে কারো দৈহিক সক্ষমতা এবং ব্যবসায়িক কৌশল রপ্ত থাকলেও তা প্রয়োগের জন্য থাকে না প্রয়োজনীয় অর্থ। এজন্য প্রয়োজন উভয়ের সমন্বয়। সেজন্যই মুদারাবায় রাব্বুল মালের পক্ষ হতে থাকে মূলধন আর মুদারিবের থাকে কারবার। উভয়ের সমন্বয়ে গড়ে উঠে সুন্দর আগামী নির্মল ভবিষ্যৎ। মানবজীবনের প্রয়োজনের তাগিদেই এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।